শিরক এবং শারদীয় পূজা মন্ডপে যাতায়াত: যুবকদের উদ্দেশে সতর্কবাণী
ভূমিকা
ইসলাম একমাত্র আল্লাহর প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস ও আনুগত্যের শিক্ষা দেয়, যা তাওহীদ বলে পরিচিত। শিরক, অর্থাৎ আল্লাহর সাথে কাউকে অংশীদার করা, ইসলামে সবচেয়ে বড় গুনাহ হিসেবে বিবেচিত। বর্তমান সময়ে বিভিন্ন উৎসব ও সামাজিক কর্মকাণ্ডের আড়ালে মুসলিম যুবকদের মধ্যে এমন কিছু প্রবণতা দেখা যায়, যা তাদের ঈমান ও তাওহীদ থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। বিশেষ করে শারদীয় পূজা মন্ডপ বা মন্দিরে যাওয়ার ঘটনা যুবকদের মাঝে উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই প্রবন্ধে যুবকদের উদ্দেশ্যে শিরক ও শারদীয় পূজা মন্ডপে যাতায়াতের ব্যাপারে সতর্কবাণী তুলে ধরা হবে।
শিরক সম্পর্কে কুরআনের বার্তা
শিরকের গুনাহ আল্লাহর কাছে মারাত্মক। কুরআন মজিদে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে:
1. إِنَّ اللَّـهَ لَا يَغْفِرُ أَن يُشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذَٰلِكَ لِمَن يَشَاءُ ۚ وَمَن يُشْرِكْ بِاللَّـهِ فَقَدِ افْتَرَىٰ إِثْمًا عَظِيمًا
(সূরা নিসা: ৪৮)
আল্লাহ বলেন, আল্লাহ শিরককে কখনো ক্ষমা করেন না, তবে এর নিচে যেসব অপরাধ রয়েছে সেগুলো যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন। যে ব্যক্তি শিরক করে, সে অবশ্যই বড় গুনাহ করেছে।
2. وَإِذْ قَالَ لُقْمَانُ لِابْنِهِ وَهُوَ يَعِظُهُ يَا بُنَيَّ لَا تُشْرِكْ بِاللَّـهِ إِنَّ الشِّرْكَ لَظُلْمٌ عَظِيمٌ
(সূরা লুকমান: ১৩)
লুকমান তার পুত্রকে উপদেশ দিয়েছিলেন, “হে আমার পুত্র! তুমি আল্লাহর সাথে শিরক করো না, কেননা শিরক হলো সবচেয়ে বড় জুলুম।”
হাদিসে শিরক সম্পর্কে সতর্কবার্তা
নবী করিম (সা.) শিরকের ভয়াবহতা সম্পর্কে বলেছেন:
1. مَن ماتَ يُشرِكُ باللَّهِ شيئًا دَخَلَ النَّارَ
(সহিহ বুখারি)
অর্থ: যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে শিরক করে মারা যায়, সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে।
2. مَن لَقِيَ اللَّهَ لا يُشرِكُ بِهِ شَيئًا دخَلَ الجنَّةَ، ومَن لَقِيَهُ يُشرِكُ بِهِ شَيئًا دخَلَ النَّارَ
(তিরমিজি)
অর্থ: যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে কোনো কিছু শিরক না করে তাঁর সাক্ষাত করবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর যে ব্যক্তি শিরক করে সাক্ষাত করবে, সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে।
শারদীয় পূজা মন্ডপে যাতায়াত: এক তাওহীদবাদীর জন্য বড় বিপদ
হে যুবক ভাই! তুমি তাওহীদবাদী। তোমার ঈমান আল্লাহর প্রতি একক বিশ্বাসে প্রতিষ্ঠিত। ইসলাম তোমাকে নিষেধ করে এমন কোনো স্থানে যাওয়া থেকে, যেখানে আল্লাহর সাথে শিরক করা হয়। শারদীয় পূজা মন্ডপ বা অন্য কোনো মন্দিরে আল্লাহ ছাড়া অন্য উপাসনার পদ্ধতি পালিত হয়, যা শিরকের অন্যতম রূপ। সেখানে আল্লাহর সাথে প্রতিযোগিতায় উপাসনা করা হয়, যা ইসলামে চরমভাবে নিষিদ্ধ। আল্লাহ তাআলা এসব স্থানে গজব নাযিল করতে পারেন।
তোমার জন্য এসব স্থানে যাওয়া একপ্রকার শিরককে সমর্থন করার সমান, আর আল্লাহর কাছে সবচেয়ে ঘৃণিত কাজ হলো শিরক। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, "শিরককারীদের জন্য জান্নাত হারাম, আর তাদের ঠিকানা জাহান্নাম।" যদি তুমি তাওহীদে বিশ্বাসী, তাহলে তুমি কখনো এমন স্থানে যেতে পারো না, যেখানে আল্লাহর সাথে অন্য কোনো সত্তাকে উপাসনা করা হয়।
অন্যের ধর্মে আনন্দ: তোমার জন্য নয়
যেমন তোমার ধর্ম অন্যদের ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান এবং আনন্দ উৎসবের অংশ নয়, তেমনই শারদীয় পূজা বা অন্য কোনো ধর্মীয় উৎসবের আনন্দ তোমার জন্য নয়। এক মুসলিম হিসেবে তোমার জীবন ধর্মীয় নীতিতে পরিচালিত হতে হবে, আর সেই নীতি তোমাকে শিরক থেকে দূরে থাকতে নির্দেশ দেয়। ইসলাম আমাদের শিক্ষা দেয় যে, আমরা অন্য ধর্মাবলম্বীদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকব, কিন্তু তাদের আচার-অনুষ্ঠান এবং ধর্মীয় প্রথার সাথে অংশগ্রহণ করব না।
উপসংহার
তাওহীদবাদী একজন মুসলিম যুবক হিসেবে তোমার দায়িত্ব হলো ঈমানকে সুরক্ষা করা। শিরক থেকে নিজেকে মুক্ত রাখো এবং কখনো এমন কোনো স্থানে যেও না, যেখানে আল্লাহর সাথে অন্য কিছুকে উপাস্য হিসেবে গ্রহণ করা হয়। শারদীয় পূজা মন্ডপ বা মন্দিরে যাতায়াতের মাধ্যমে তুমি শিরকের নিকটবর্তী হতে পারো, যা তোমার ঈমানের জন্য চরম ক্ষতিকর। আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য এবং তাওহীদ রক্ষার জন্য এ ধরনের স্থান থেকে নিজেকে বিরত রাখো, আর ইসলামের সঠিক পথে জীবন যাপন করো।