মৃত্যু ও পরকালীন জীবন
নিশ্চিতভাবেই আমাদের এই দুনিয়ার জীবন ক্ষণস্থায়ী, আর আমাদের চূড়ান্ত গন্তব্য আল্লাহর কাছে ফিরে যাওয়া। মৃত্যুর পরে চিরস্থায়ী পরকালে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে এক অনন্ত জীবন, যা পৃথিবীর এই সাময়িক জীবনের পরবর্তী অধ্যায়। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা এই বিষয়ে আমাদের বিভিন্ন আয়াতে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন:
كُلُّ نَفْسٍ ذَائِقَةُ الْمَوْتِ وَإِنَّمَا تُوَفَّوْنَ أُجُورَكُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ۖ فَمَن زُحْزِحَ عَنِ النَّارِ وَأُدْخِلَ الْجَنَّةَ فَقَدْ فَازَ ۗ وَمَا الْحَيَاةُ الدُّنْيَا إِلَّا مَتَاعُ الْغُرُورِ
অর্থ: প্রত্যেক প্রাণী মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করবে, আর কেবলমাত্র কিয়ামতের দিনই তোমাদের কর্মফল পূর্ণাঙ্গরূপে প্রদান করা হবে। যে জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভ করবে ও জান্নাতে প্রবেশ করবে, সে-ই সফল। আর পার্থিব জীবন মিথ্যা ছলনা ছাড়া কিছুই নয়। (সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৮৫)
আল্লাহ তা'আলা অন্য আয়াতে পৃথিবীর ক্ষণস্থায়ীত্ব এবং তার মহিমাময় সত্তার চিরন্তনত্বের কথাও স্মরণ করিয়ে দেন:
كُلُّ مَنْ عَلَيْهَا فَانٍ وَيَبْقَىٰ وَجْهُ رَبِّكَ ذُو الْجَلَالِ وَالْإِكْرَامِ
অর্থ: পৃথিবীর ওপর যা কিছু আছে সবই ধ্বংসশীল, কিন্তু তোমার রবের মহিমাময় সত্তা চিরস্থায়ী। (সূরা আর-রহমান, আয়াত: ২৬-২৭)
আল্লাহ তা'আলা আমাদের সতর্ক করেছেন যে মৃত্যুকে পালিয়ে এড়ানো সম্ভব নয়:
أَيْنَمَا تَكُونُوا يُدْرِككُّمُ الْمَوْتُ وَلَوْ كُنتُمْ فِي بُرُوجٍ مُّشَيَّدَةٍ
অর্থ: যেখানেই থাকো মৃত্যু তোমাদেরকে খুঁজে বের করবে, যদি দুর্গম প্রাসাদেও থাকো। (সূরা নিসা, আয়াত: ৭৮)
মৃত্যুর অবধারিত পরিণতির কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি আরও বলেন:
قُلْ إِنَّ الْمَوْتَ الَّذِي تَفِرُّونَ مِنْهُ فَإِنَّهُ مُلَاقِيكُمْ ثُمَّ تُرَدُّونَ إِلَىٰ عَالِمِ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ فَيُنَبِّئُكُم بِمَا كُنتُمْ تَعْمَلُونَ
অর্থ: বলুন, তোমরা যে মৃত্যুকে এড়িয়ে চল, তা অবশ্যই তোমাদেরকে পাকড়াও করবে। তারপর তোমরা অদৃশ্য ও দৃশ্যমান সমস্ত বিষয়ে অবগত রবের কাছে ফিরে যাবে। তারপর তোমাদের আমল সম্বন্ধে জানিয়ে দেয়া হবে। (সূরা জুমু’আহ, আয়াত: ৮)
এই আয়াতগুলো আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, আমাদের আমলই পরকালীন জীবনের সাফল্য বা ব্যর্থতার চাবিকাঠি। মৃত্যুর পর মুমিনের জন্য কবরের জীবন হতে পারে প্রশান্তির, আর কাফির বা পাপিষ্ঠের জন্য তা হতে পারে কঠিন পরীক্ষার। আল্লাহর পথে থেকে পরকালীন জীবনের জন্য প্রস্তুত থাকাই আমাদের আসল কর্তব্য।
বদকারের মৃত্যু ও তার কবরের দুরবস্থা
মৃত্যু প্রতিটি মানুষের জন্য অবধারিত, এবং তার পরবর্তী জীবনের ভালো-মন্দ নির্ভর করে দুনিয়াতে তার সৎকর্ম ও পাপের উপর। পাপী ও আল্লাহর অবাধ্য ব্যক্তির জন্য কবরের জীবন কঠিন ও ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে। আল্লাহ তা'আলা কুরআনে বদকারদের মৃত্যুর সময়ের কষ্ট ও তাদের কবরের অবস্থা সম্পর্কে বর্ণনা করেছেন:
وَلَوْ تَرَىٰ إِذِ ٱلظَّـٰلِمُونَ فِى غَمَرَٰتِ ٱلْمَوْتِ وَٱلْمَلَـٰٓئِكَةُ بَاسِطُوٓا۟ أَيْدِيهِمْ أَخْرِجُوٓا۟ أَنفُسَكُمُ ٱلْيَوْمَ تُجْزَوْنَ عَذَابَ ٱلْهُونِ بِمَا كُنتُمْ تَقُولُونَ عَلَى ٱللَّهِ غَيْرَ ٱلْحَقِّ وَكُنتُمْ عَنْ ءَايَـٰتِهِۦ تَسْتَكْبِرُونَ
অর্থ: আর যদি তুমি দেখো সেই সময়, যখন জালিমরা মৃত্যুর কষ্টে নিমজ্জিত থাকে এবং ফেরেশতারা তাদের প্রতি হাত প্রসারিত করে বলেন, ‘তোমাদের প্রাণ বের করো। আজ তোমাদেরকে লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি দেয়া হবে। কারণ, তোমরা আল্লাহর বিরুদ্ধে মিথ্যা বলেছিলে এবং তার আয়াতের প্রতি ঔদ্ধত্য প্রদর্শন করেছিলে।’ (সূরা আন’আম, আয়াত: ৯৩)
কবরের জীবন, বিশেষত পাপিষ্ঠের জন্য, চিরস্থায়ী শাস্তির একটি কঠিন ও ভীতিকর স্থান হতে পারে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবরের অবস্থার বিষয়ে বলেছেন, কবর হয় জান্নাতের একটি বাগান অথবা জাহান্নামের একটি গর্তের মতো। যাদের দুনিয়ার জীবন পাপ ও অহংকারে পূর্ণ ছিল, তাদের জন্য কবর জাহান্নামের কঠিন শাস্তির শুরু হতে পারে।
القبر إما روضة من رياض الجنة أو حفرة من حفر النار
অর্থ: কবর হয় জান্নাতের একটি বাগান অথবা জাহান্নামের একটি গর্ত।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের কবর পরিদর্শনের জন্য উৎসাহিত করেছেন। তিনি বলেছেন:
كنت قد نهيتكم عن زيارة القبور فزوروها فإنها تذكر الآخرة
অর্থ: আমি তোমাদের কবর পরিদর্শন করতে নিষেধ করেছিলাম, এখন তোমরা কবর পরিদর্শন করো। কারণ, এটি পরকালের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।
কবর পরিদর্শনের মাধ্যমে আমরা মৃত্যুর বাস্তবতা ও পরকালীন জীবনের গুরুত্ব অনুভব করতে পারি। পাপী ব্যক্তির কবরের দুরবস্থা থেকে আমরা শিক্ষা নিতে পারি এবং আল্লাহর পথে চলার প্রেরণা লাভ করতে পারি। আল্লাহর সন্তুষ্টির পথে আমাদের জীবন পরিচালিত করাই এই দুনিয়ার উদ্দেশ্য হওয়া উচিত।
নেককারের মৃত্যু ও তার কবরের সুঅবস্থা
নেককারদের মৃত্যু হলো শান্তির এক দিকনির্দেশনা, যা তাকে আল্লাহর সান্নিধ্যে পৌঁছে দেয়। পরকালের জীবনে তাদের জন্য রয়েছে অনন্ত শান্তি ও আনন্দ। আল্লাহ তায়ালা মৃত্যুর মাধ্যমে নেককারদেরকে তাঁর সান্নিধ্যে গ্রহণ করেন এবং তাদেরকে জান্নাতের সুসংবাদ প্রদান করেন। মৃত্যুর পর নেককারের জন্য কবর হয় জান্নাতের বাগানের মতো, যেখানে তারা শান্তি ও প্রশান্তির মধ্যে থাকে।
রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন:
الموت جسر يرسل الحبيب الى الحبيب
অর্থ: মৃত্যু হলো এমন একটি সেতু যা প্রিয়কে তার প্রিয়তমের কাছে পৌঁছে দেয়।
এ ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা কুরআনে মুমিনদের সম্পর্কে বলেছেন:
يَا أَيَّتُهَا النَّفْسُ الْمُطْمَئِنَّةُ ارْجِعِي إِلَى رَبِّكِ رَاضِيَةً مَرْضِيَّةً فَادْخُلِي فِي عِبَادِي وَادْخُلِي جَنَّتِي
অর্থ: হে প্রশান্ত আত্মা! তোমার প্রভুর দিকে ফিরে এসো সন্তুষ্টি ও প্রীতিসহকারে। আমার বান্দাদের মধ্যে প্রবেশ করো এবং আমার জান্নাতে প্রবেশ করো। (সূরা আল-ফজর, আয়াত: ২৭-৩০)
নেককাররা আল্লাহকে তাদের রব হিসেবে স্বীকার করে এবং সৎপথে চলতে থাকে। তাদের মৃত্যুর সময় আল্লাহর পক্ষ থেকে ফেরেশতারা নেমে এসে তাদের জান্নাতের সুসংবাদ প্রদান করে:
إِنَّ الَّذِينَ قَالُوا رَبُّنَا اللَّهُ ثُمَّ اسْتَقَامُوا تَتَنَزَّلُ عَلَيْهِمُ الْمَلَائِكَةُ أَلَّا تَخَافُوا وَلَا تَحْزَنُوا وَأَبْشِرُوا بِالْجَنَّةِ الَّتِي كُنتُمْ تُوعَدُونَ
অর্থ: নিশ্চয়ই যারা বলে, ‘আমাদের প্রভু আল্লাহ’ এবং সৎপথে অটল থাকে, তাদের উপর ফেরেশতারা অবতরণ করে এবং বলে, ‘তোমরা ভীত হবে না, দুঃখিতও হবে না এবং সেই জান্নাতের সুসংবাদ গ্রহণ কর, যার প্রতিশ্রুতি তোমাদের দেয়া হয়েছে।" (সূরা ফুসসিলাত, আয়াত: ৩০)
ফেরেশতারা আরও বলে:
نَحْنُ أَوْلِيَاؤُكُمْ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَفِي الْآخِرَةِ وَلَكُمْ فِيهَا مَا تَشْتَهِي أَنفُسُكُمْ وَلَكُمْ فِيهَا مَا تَدَّعُونَ نُزُلًا مِّنْ غَفُورٍ رَّحِيمٍ
অর্থ: আমরা তোমাদের বন্ধু ছিলাম দুনিয়ার জীবনে এবং পরকালেও। সেখানে তোমাদের জন্য রয়েছে যা তোমরা চাও, এবং যা তোমাদের মন চায়, সবকিছুই। এটি ক্ষমাশীল, দয়াময় আল্লাহর পক্ষ থেকে তোমাদের জন্য সম্মানসূচক আপ্যায়ন। (সূরা ফুসসিলাত, আয়াত: ৩১-৩২)
এগুলোই নেককারের জন্য পরকালীন জীবনের শান্তি ও কবরের সুঅবস্থা, যা তাদের জন্য অনন্ত শান্তি ও সুখ নিয়ে আসে। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে তাঁর নেককার বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত করুন, আমিন।
শেষ কথা
প্রিয় ভাইয়েরা, আমাদের জীবন-জীবিকা, ধন-সম্পদ, বাড়ি-গাড়ি, সন্তান-সন্ততি, সামাজিক মর্যাদা – এসব কিছুই আখেরাতে আমাদের কোনো কাজে আসবে না। আল্লাহ তায়ালা এবং তাঁর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যে পথ দেখিয়েছেন, সেই পথেই আমাদের চলা উচিত। অন্যথায় এই দুনিয়ার সামান্য আরাম-আয়েশ আখেরাতের কঠিন পরীক্ষায় কাজে আসবে না।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন:
إذا مات الإنسان انقطع عمله إلا من ثلاث: صدقة جارية، أو علم ينتفع به، أو ولد صالح يدعو له
যখন একজন মানুষ মারা যায়, তখন তার সব আমল বন্ধ হয়ে যায়, তবে তিনটি জিনিস তার আমলনামায় থেকে যায়: সদকায়ে জারিয়া, উপকারী জ্ঞান, ও নেক সন্তান যারা তার জন্য দোয়া করবে (সহিহ মুসলিম)
সুতরাং, আমাদের করণীয় হলো:
১. সদকায়ে জারিয়া: এমন সদকা বা দান যা মানুষের উপকারে আসে এবং যার সাওয়াব মৃত্যুর পরেও চলে। যেমন মসজিদ নির্মাণ, কুয়ো খনন, গরিবদের জন্য সাহায্য প্রদান – এসব কাজ মৃত্যুর পরেও সাওয়াব হিসেবে বহাল থাকে।
২. উপকারী জ্ঞান: এমন জ্ঞান অর্জন এবং প্রচার করা যা মানুষ উপকারের জন্য ব্যবহার করতে পারে। যারা ইসলামের জ্ঞান, মানবিকতা ও মূল্যবোধের শিক্ষা দেয়, তাদের জন্য এই আমল মৃত্যুর পরেও সওয়াব হিসেবে অবশিষ্ট থাকে।
৩. নেক সন্তান: যারা আল্লাহর পথে চলবে এবং পিতামাতার জন্য দোয়া করবে। তাদের দোয়া মৃত ব্যক্তির জন্য কবরের একান্ত প্রয়োজন পূরণ করে।
মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়ার গুরুত্ব সম্পর্কে নবীজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন:
ما الميت في القبر إلا كالغريق المغيث، ينتظر دعوة تلحقه من أب أو أم أو ولد أو صديق، فإذا لحقته كان أحب إليه من الدنيا وما فيها
মৃত ব্যক্তি কবরের মধ্যে পানিতে ডুবে যাওয়া ব্যক্তির মতো থাকে, যে অপেক্ষা করে পিতা, মাতা, সন্তান, বা কোনো বন্ধুর দোয়ার জন্য। যখন দোয়া তার কাছে পৌঁছে, এটি তার জন্য দুনিয়া এবং এর সমস্ত কিছুর চেয়ে প্রিয় হয়। (মুসনাদে আহমাদ)
এছাড়াও, জীবিতরা মৃতদের জন্য যখন দোয়া ও ইস্তেগফার করে, তখন আল্লাহ তাদের জন্য পাহাড়ের মতো সাওয়াব পাঠান এবং তাদের কবরের অবস্থাও সহজ করে দেন।
১. কবরের আজাব থেকে আশ্রয় চাওয়ার দোয়া
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) প্রতিটি নামাজের পরে এই দোয়াটি পড়তেন।
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ، وَمِنْ عَذَابِ جَهَنَّمَ، وَمِنْ فِتْنَةِ الْمَحْيَا وَالْمَمَاتِ، وَمِنْ شَرِّ فِتْنَةِ الْمَسِيحِ الدَّجَّالِ
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযু বিকা মিন ‘আযাবিল কবরি, ওয়া মিন ‘আযাবি জাহান্নাম, ওয়া মিন ফিত্নাতিল মাহইয়া ওয়াল মামাত, ওয়া মিন শাররি ফিত্নাতিল মাসীহিদ দজ্জাল।
অর্থ: হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি কবরের শাস্তি থেকে, জাহান্নামের শাস্তি থেকে, জীবন ও মৃত্যুর ফিতনা থেকে এবং দাজ্জালের শয়তানি ফিতনা থেকে। (সহিহ মুসলিম ৫৮৮)
২. কবরের আজাব থেকে মুক্তি পেতে সুরা মুলক পড়া
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, সুরা মুলক পড়লে তা কবরের আজাব থেকে রক্ষা করবে।
قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ: "إِنَّ سُورَةً فِي الْقُرْآنِ ثَلَاثُونَ آيَةً شَفَعَتْ لِصَاحِبِهَا حَتَّى غُفِرَ لَهُ، وَهِيَ تَبَارَكَ الَّذِي بِيَدِهِ الْمُلْكُ"
অর্থ: রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, কুরআনে একটি সূরা আছে, যার ৩০টি আয়াত আছে, যা তার পাঠকের জন্য সুপারিশ করবে এবং তাকে ক্ষমা করা হবে। এটি হলো সুরা মুলক (তিরমিজি ২৮৯১)
৩. নিয়মিতভাবে সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক, এবং সুরা নাস পড়া
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদেরকে ফজর ও মাগরিবের পর তিনবার করে সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক, এবং সুরা নাস পড়ার জন্য উৎসাহিত করেছেন, যা কবর ও জীবনের অন্যান্য ফিতনা থেকে রক্ষা করে।
قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ، قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ الْفَلَقِ، قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ النَّاسِ
এই সুরাগুলো প্রতিদিন সকালে ও সন্ধ্যায় পড়লে আল্লাহ আমাদেরকে বিভিন্ন ফিতনা ও শাস্তি থেকে রক্ষা করবেন।
৪. নিচের দোয়াটি পড়া
এই দোয়াটিও কবরের শাস্তি থেকে মুক্তির জন্য কার্যকর:
رَبِّ اغْفِرْ لِي وَلِوَالِدَيَّ وَلِلْمُؤْمِنِينَ يَوْمَ يَقُومُ الْحِسَابُ
উচ্চারণ: রব্বিগফিরলী ওয়ালিওয়ালিদাইয়া ওয়ালিলমুমিনীনা ইয়াওমা ইয়াকুমুল হিসাব।
অর্থ: হে আমার রব! আমাকে ক্ষমা করুন, আমার পিতা-মাতাকে এবং সকল মুমিনকে যেদিন হিসাব নেয়া হবে। (সূরা ইবরাহীম: ৪১)
৫. "আল্লাহুম্মা বারিক লানা" দোয়াটি পড়া
কবরের শাস্তি থেকে বাঁচার জন্য আল্লাহর দয়া প্রার্থনা করে নিচের দোয়াটি পড়া যেতে পারে:
اللَّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِي مَوْتِنَا وَاجْعَلْ قُبُورَنَا رَوْضَةً مِنْ رِيَاضِ الْجَنَّةِ وَلَا تَجْعَلْهَا حُفْرَةً مِنْ حُفَرِ النَّارِ
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি মাওতিনা ওয়াজ’আল কুবুরানা রাওজাতাম মিন রিয়াযিল জান্নাতি ওয়ালা তাজ’আলহা হুফরাতাম মিন হুফারিন নার।
অর্থ: হে আল্লাহ! আমাদের মৃত্যুতে বরকত দিন এবং আমাদের কবরগুলোকে জান্নাতের বাগান বানিয়ে দিন। আমাদের কবরগুলোকে জাহান্নামের গর্তে পরিণত করবেন না।
সর্বশেষ করণীয়:
আমাদের জীবনের প্রতিটি কাজে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনকে অগ্রাধিকার দিতে হবে এবং রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর দেখানো পথে চলতে হবে। নেক আমল, দান-সদকা এবং সন্তানদের নেক পথে পরিচালনা করতে হবে, যাতে আমরা মৃত্যুর পরও সাওয়াবের ধারাবাহিকতায় থাকতে পারি। দোয়া করি, আল্লাহ আমাদের এই তিনটি কর্ম যথাযথভাবে করার তৌফিক দান করুন, এবং আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে এই দোয়াগুলো পড়ার তৌফিক দান করুন এবং কবরের শাস্তি থেকে আমাদের রক্ষা করুন, আমিন।
خُطْبَةٌ: المَوْتُ وَالحَيَاةُ الآخِرَةُ
أما بعد؛ فيا أيها الإخوة المؤمنون، أوصيكم ونفسي المقصرة بتقوى الله، فاتقوا الله حق تقاته ولا تموتن إلا وأنتم مسلمون.
إخوتي في الله، إن الموت حقيقةٌ ثابتةٌ لا مفر منها، كما قال الله تعالى: "كُلُّ نَفْسٍ ذَائِقَةُ الْمَوْتِ وَإِنَّمَا تُوَفَّوْنَ أُجُورَكُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَمَنْ زُحْزِحَ عَنِ النَّارِ وَأُدْخِلَ الْجَنَّةَ فَقَدْ فَازَ وَمَا الْحَيَاةُ الدُّنْيَا إِلَّا مَتَاعُ الْغُرُورِ" (سورة آل عمران: 185). كلنا مصيرنا إلى الموت، ولن ينفعنا في ذلك اليوم مالٌ ولا جاهٌ ولا سلطان، بل فقط إيماننا وأعمالنا الصالحة.
عباد الله، ما قيمة الدنيا وزخارفها إذا لم نتبع أوامر الله ونسير على خطى النبي الكريم ﷺ؟ هل ستنفعنا أموالنا أو بيوتنا أو مكانتنا الدنيوية؟ لا، والله لن تنفعنا، فلنتذكر قول النبي ﷺ: "إِذَا مَاتَ الإِنسَانُ انْقَطَعَ عَمَلُهُ إِلَّا مِنْ ثَلَاثٍ: صَدَقَةٍ جَارِيَةٍ، أَوْ عِلْمٍ يُنْتَفَعُ بِهِ، أَوْ وَلَدٍ صَالِحٍ يَدْعُو لَهُ" (رواه مسلم).
فهذه الأمور الثلاثة: الصدقة الجارية، والعلم النافع، والولد الصالح، هي ما يبقى لنا بعد موتنا.
أيها المسلمون، عليكم بالصدقة الجارية، مثل بناء المساجد، وحفر الآبار، وإعانة الفقراء والمحتاجين. وأيضاً عليكم بطلب العلم وتعليمه للآخرين، فإنه ينفعكم في الدنيا والآخرة، وتربية أولادكم على الصلاح، فإن دعاءهم بعد موتكم سيكون نوراً في قبوركم.
وقد ورد عن النبي ﷺ أنه قال عن حال الميت في قبره: "ما الميتُ في القبرِ إلا كالغريقِ المغيثِ، ينتظرُ دعوةً تلحقُه من أبٍ أو أمٍّ أو ولدٍ أو صديقٍ، فإذا لحقته كان أحبَّ إليه من الدنيا وما فيها" (رواه أحمد).
ألا وإن دعاء الأحياء للموتى ينزل عليهم بركات عظيمة ويكون لهم نفعٌ كبير.
أيها الإخوة، أوصيكم بأن تجعلوا حياتكم في طاعة الله، وسيروا على خطى رسوله الكريم، وأدّوا أعمالًا صالحةً مستمرة تنفعكم بعد موتكم، وأحسنوا تربية أولادكم، وأسأل الله تعالى أن يتقبل منا ومنكم صالح الأعمال، وأن يجعلنا وإياكم من أهل الجنة.
اللهم اجعل قبورنا روضةً من رياض الجنة، ولا تجعلها حفرةً من حفر النار، اللهم ارزقنا صدقةً جاريةً، وعلمًا نافعًا، وولدًا صالحًا يدعو لنا.
أقول قولي هذا، وأستغفر الله لي ولكم ولسائر المسلمين، فاستغفروه إنه هو الغفور الرحيم.