জুমার দিনের গুরুত্ব ও বিশেষ মুহূর্ত: কুরআন, হাদিস, ও কবিতার আলোকে
জুমার দিন ইসলামে অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ। এই দিনকে সপ্তাহের সেরা দিন হিসেবে গণ্য করা হয় এবং মুসলিমদের জন্য এটি বিশেষ ইবাদতের দিন। আল্লাহ তাআলা জুমার দিনে বিশেষ রহমত বর্ষণ করেন এবং দোয়া কবুলের একটি বিশেষ মুহূর্তও নির্ধারিত করেছেন। কুরআন, হাদিস এবং বিভিন্ন ইসলামী সাহিত্যে জুমার দিনের ফজিলত ও গুরুত্ব বারবার আলোচনা করা হয়েছে।
১. কুরআনে জুমার দিনের গুরুত্ব
জুমার নামাজ নিয়ে আল্লাহ তাআলা কুরআনে বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন। সূরা আল-জুমুআ এর ৯-১০ আয়াতে তিনি বলেন:
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا نُودِيَ لِلصَّلَاةِ مِن يَوْمِ الْجُمُعَةِ فَاسْعَوْا إِلَىٰ ذِكْرِ اللَّهِ وَذَرُوا الْبَيْعَ ۚ ذَٰلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ
বাংলা অনুবাদ: "হে মুমিনগণ! যখন জুমার দিনে নামাজের জন্য আহ্বান করা হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের দিকে দ্রুত এগিয়ে যাও এবং ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ করে দাও। এটাই তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা জানো।"
(সূরা আল-জুমুআ, আয়াত: ৯)
এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা নির্দেশ দিয়েছেন যে, জুমার দিনে নামাজের আহ্বান শোনা মাত্র সব কাজ বাদ দিয়ে আল্লাহর স্মরণে মগ্ন হতে হবে। এই সময় ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ রাখা এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ইবাদতে নিয়োজিত থাকা প্রত্যেক মুসলিমের কর্তব্য।
২. হাদিসে জুমার দিনের বিশেষ মুহূর্ত
জুমার দিন সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সা.) দোয়া কবুলের একটি বিশেষ মুহূর্তের কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন:
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ذَكَرَ يَوْمَ الْجُمُعَةِ فَقَالَ " فِيهِ سَاعَةٌ لاَ يُوَافِقُهَا عَبْدٌ مُسْلِمٌ وَهُوَ قَائِمٌ يُصَلِّي يَسْأَلُ اللَّهَ شَيْئًا إِلاَّ أَعْطَاهُ إِيَّاهُ ".
বাংলা অনুবাদ: আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) জুমার দিনের কথা উল্লেখ করে বলেছেন, "এই দিনে এমন একটি মুহূর্ত রয়েছে, যখন কোনো মুসলিম বান্দা নামাজ পড়া অবস্থায় আল্লাহর কাছে যা কিছু চাইবে, আল্লাহ তাকে তা দান করবেন।"
(সহীহ বুখারি, হাদিস: 935)
এই বিশেষ মুহূর্তটি নিয়ে বিভিন্ন মতামত রয়েছে, তবে দুইটি প্রধান সময়কে গুরুত্ব দেওয়া হয়:
- জুমার খুতবা থেকে নামাজ শেষ হওয়া পর্যন্ত।
- আছরের পর থেকে মাগরিবের আগ পর্যন্ত।
রাসূলুল্লাহ (সা.) জাবির ইবন আব্দুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত আরেকটি হাদিসে বলেছেন:
"يَوْمُ الْجُمُعَةِ اثْنَتَا عَشْرَةَ سَاعَةً لاَ يُوجَدُ عَبْدٌ مُسْلِمٌ يَسْأَلُ اللَّهَ شَيْئًا إِلاَّ آتَاهُ إِيَّاهُ، فَاطْلُبُوهَا آخِرَ سَاعَةٍ بَعْدَ الْعَصْرِ."
বাংলা অনুবাদ: "জুমার দিন বারোটি ঘণ্টা রয়েছে, এর মধ্যে এমন একটি সময় আছে যখন কোনো মুসলিম আল্লাহর কাছে যা কিছু চায়, আল্লাহ তাকে তা দান করেন। তোমরা সেই সময়টি আছরের পর সন্ধ্যা মাগরিবের আগে খুঁজে নাও।"
(সুনান আবু দাউদ, হাদিস: 1048)
৩. জুমার দিনের মর্যাদা নিয়ে কবিতা
জুমার দিনের গুরুত্ব ও ফজিলত নিয়ে ইসলামী সাহিত্যেও অনেক কবিতা রচিত হয়েছে। আরবি, উর্দু ও বাংলা ভাষায় জুমার ফজিলত ও ইবাদতের উপর ভিত্তি করে কিছু কবিতার পংক্তি উল্লেখ করা হলো:
আরবি কবিতা:
إِنَّ لِيْ فِي يَوْمِ الجُمُعَةِ نَفْحَةٌ
إِنَّهَا مِنْ رَبِّي رَحْمَةٌ
বাংলা অনুবাদ:
"আমার জন্য জুমার দিনে রহমতের বাতাস আছে,নিশ্চয়ই তা আমার প্রভুর পক্ষ থেকে এক রহমত।"
উর্দু কবিতা (আল্লামা ইকবাল):
ہر گھڑی جُمعے کا دن ہے، دَیِّنوں کا دن
رحمتوں کا، برکتوں کا، عافیتوں کا دن
বাংলা অনুবাদ:
"জুমার প্রতিটি সময় হলো ধর্মপ্রাণদের জন্য একটি দিন,এটি হলো রহমত, বরকত, এবং সুরক্ষার দিন।"
বাংলা কবিতা:
জুমার দিন, বরকতের দিন,
আল্লাহর রহমতে ভরা,
এই দিনে করো দোয়া,
সুখে থাকবে দুনিয়া সারা।
৪. উপসংহার
জুমার দিন আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি বিশেষ উপহার। এই দিনে ইবাদত ও দোয়ার প্রতি বিশেষ মনোযোগ দেওয়া উচিত। কুরআনের নির্দেশ, হাদিসের ব্যাখ্যা এবং ইসলামী সাহিত্যের আলোকে আমরা বুঝতে পারি যে, জুমার দিন বিশেষ বরকতময় এবং এতে দোয়া কবুলের বিশেষ সময় রয়েছে, যা আল্লাহর রহমতের প্রতিফলন।
الخُطْبَةُ الأُولَى
الحمدُ للهِ الذي جَعَلَ يومَ الجمعةِ عيدًا للمسلمينَ، وفضَّلَهُ على سائرِ الأيَّامِ، وأشهدُ أن لا إلهَ إلاَّ اللهُ وحدَهُ لا شريكَ له، وأشهدُ أنَّ محمدًا عبدُهُ ورسولُهُ، صلَّى اللهُ عليهِ وعلى آلِهِ وأصحابِهِ أجمعينَ.
أمَّا بعدُ، فيا أيُّها المؤمنونَ! اتَّقوا اللهَ حقَّ تقاتِهِ، وراقِبوهُ في السرِّ والعلانيةِ، واعلموا أنَّ يومَ الجمعةِ يومٌ عظيمٌ ومباركٌ.
قال اللهُ تعالى في كتابِهِ الكريمِ:
﴿يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا نُودِيَ لِلصَّلَاةِ مِن يَوْمِ الْجُمُعَةِ
فَاسْعَوْا إِلَىٰ ذِكْرِ اللَّهِ وَذَرُوا الْبَيْعَ ۚ ذَٰلِكُمْ خَيْرٌ
لَّكُمْ إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ﴾
(سورة الجمعة: 9)
أيها المسلمونَ! لقد فضَّل اللهُ يومَ الجمعةِ على سائرِ الأيَّامِ، وفيه ساعةٌ لا يوافِقُها عبدٌ مسلمٌ وهو قائمٌ يُصَلِّي يسألُ اللهَ شيئًا إلاَّ أعطاهُ إيَّاهُ.
قال النبيُّ صلَّى اللهُ عليهِ وسلَّمَ:
"فِيهِ سَاعَةٌ لَا يُوَافِقُهَا عَبْدٌ مُسْلِمٌ يَسْأَلُ اللَّهَ فِيهَا خَيْرًا
إِلَّا أَعْطَاهُ إِيَّاهُ"
(رواه البخاريُّ ومسلمٌ).
فالواجبُ علينا أن نُكثِرَ منَ الدعاءِ في هذا اليومِ المباركِ، وأن نستغلَّ كلَّ لحظةٍ في هذا اليومِ، خاصَّةً بعدَ صلاةِ العصرِ إلى غروبِ الشمسِ، كما أشارَ النبيُّ صلَّى اللهُ عليهِ وسلَّمَ في حديثِ جابرِ بنِ عبدِ اللهِ رضيَ اللهُ عنه:
"يَوْمُ الْجُمُعَةِ اثْنَتَا عَشْرَةَ سَاعَةً، لَا يُوجَدُ عَبْدٌ مُسْلِمٌ يَسْأَلُ
اللَّهَ شَيْئًا إِلَّا آتَاهُ إِيَّاهُ، فَالْتَمِسُوهَا آخِرَ سَاعَةٍ
بَعْدَ الْعَصْرِ"
(رواهُ أبو داود).
فاجتهِدُوا في هذا اليومِ بالطاعاتِ، واستعدُّوا لهُ بالعباداتِ، فإنَّ اللهَ جعلَهُ يومَ المغفرةِ والرحمةِ.
نفعني اللهُ وإيَّاكم بالقرآنِ العظيمِ، وبهدي سيدِ المرسلينَ. أقولُ قولي هذا، وأستغفرُ اللهَ لي ولكم فاستغفروهُ، إنَّهُ هو الغفورُ الرحيمُ.