নারীকে বিয়ে করার ক্ষেত্রে ইসলামের দিকনির্দেশনা
বিয়ে ইসলামে একটি পবিত্র এবং গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। এটি শুধুমাত্র শারীরিক ও মানসিক তৃপ্তির জন্য নয়, বরং পরিবার গঠন এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের একটি মাধ্যম। কুরআন ও হাদিসে একজন নারীকে বিয়ের ক্ষেত্রে বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্যের প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। নিচে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:
১. ধর্মপরায়ণতা: প্রধান বৈশিষ্ট্য
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
"তُنْكَحُ الْمَرْأَةُ لِأَرْبَعٍ: لِمَالِهَا، وَلِحَسَبِهَا، وَلِجَمَالِهَا، وَلِدِينِهَا، فَاظْفَرْ بِذَاتِ الدِّينِ تَرِبَتْ يَدَاكَ"
“নারীদের বিয়ে করা হয় চার কারণে: তার সম্পদ, বংশ, সৌন্দর্য এবং ধর্ম। তবে তুমি ধর্মপরায়ণ নারীকে গ্রহণ কর, তাতে তোমার কল্যাণ।”
(সহিহ বুখারি: ৫০৯০, সহিহ মুসলিম: ১৪৬৬)
ধর্মপরায়ণ নারী সংসারে শান্তি এবং আল্লাহর বিধান মেনে চলার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এজন্যই বিয়ের সময় ধর্মীয় বিশ্বাসকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে বলা হয়েছে।
২. চরিত্র ও আচার-ব্যবহার
কুরআনে আল্লাহ বলেন:
"وَالصَّالِحَاتُ قَانِتَاتٌ حَافِظَاتٌ لِلْغَيْبِ بِمَا حَفِظَ اللَّهُ"
“আর সৎ নারীরা অনুগত এবং গোপন বিষয় সংরক্ষণকারী, যা আল্লাহ সংরক্ষণ করেছেন।”
(সূরা আন-নিসা: ৩৪)
চরিত্র এবং আচার-ব্যবহার একজন নারীর প্রধান গুণ। শালীন এবং পর্দাশীল নারী সংসারে স্থিতিশীলতা এবং প্রশান্তি আনতে সক্ষম।
৩. সততা এবং পবিত্রতা
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
"الدنيا متاع وخير متاع الدنيا المرأة الصالحة"
“পৃথিবী হলো ভোগের জিনিস, আর পৃথিবীর সর্বোত্তম ভোগ্যসামগ্রী হলো একজন সৎ স্ত্রী।”
(সহিহ মুসলিম: ১৪৬৭)
একজন সৎ ও পবিত্র চরিত্রের নারী তার স্বামী ও পরিবারের জন্য আনন্দ এবং শান্তি বয়ে আনে।
৪. সন্তান প্রতিপালনে দক্ষতা
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
"تَزَوَّجُوا الوَدُودَ الوَلُودَ، فَإِنِّي مُكَاثِرٌ بِكُمُ الأُمَمَ يَوْمَ القِيَامَةِ"
“তোমরা এমন নারীকে বিয়ে করো, যারা স্নেহশীলা এবং বেশি সন্তান জন্ম দিতে সক্ষম। কেননা কিয়ামতের দিন আমি তোমাদের সংখ্যাধিক্য নিয়ে গর্ব করব।”
(আবু দাউদ: ২০৫০, নাসাঈ: ৩২২৭)
সন্তান প্রতিপালনের ক্ষেত্রে দক্ষ নারী পরিবার ও সমাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
৫. শারীরিক সৌন্দর্য
ইসলামে সৌন্দর্যের দিকটি উপেক্ষা করা হয়নি, তবে এটিকে প্রাথমিক শর্ত হিসেবে নয়, বরং গৌণ শর্ত হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে।
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
"إِذَا نَظَرَ إِلَيْهَا سَرَّتْهُ"
“যখন সে তার স্ত্রীর দিকে তাকাবে, তখন সে খুশি হবে।”
(সুনান ইবনে মাজাহ: ১৮৫৬)
সৌন্দর্য মানসিক প্রশান্তি দেয়, তবে এটি কখনোই ধর্ম এবং চরিত্রের চেয়ে অগ্রাধিকার পাওয়ার বিষয় নয়।
উপসংহার
ইসলামে একজন নারীকে বিয়ের ক্ষেত্রে ধর্ম, চরিত্র, সততা, আনুগত্য এবং সন্তান প্রতিপালনের মতো গুণাবলিকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। শুধুমাত্র সৌন্দর্য বা সম্পদের কারণে বিয়ে করলে সংসারে স্থায়িত্ব আসে না। রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নির্দেশনা মেনে চললে সংসার হবে সুখময় এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন সহজ হবে।
পরামর্শ
যদি আপনি একটি সুন্দর এবং শান্তিপূর্ণ জীবন চান, তবে নারীর ধর্মীয় বিশ্বাস ও চরিত্রকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিন। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিকভাবে জীবনসঙ্গী নির্বাচন করার তৌফিক দান করুন।
আমিন।